
অপরের
বিবাহিত স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম সংঘটিত হলে তখন সেটি আইনের ভাষায় ‘ব্যভিচার’ বা ‘Adultery’ হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশের ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারানুযায়ী ‘ব্যভিচার’ আইনের চোখে অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য।
দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা পড়ে দেখি-
“‘কোনো পুরুষ যদি
জেনেশুনে কোনো বিবাহিত নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি না নিয়ে বা তার অজান্তে
শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, এবং অনুরূপ যৌন সঙ্গম যদি
ধর্ষণ না হয় তাহলে তা ব্যভিচারের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং শাস্তিস্বরূপ
সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয়ই প্রযোজ্য হতে পারে।
এক্ষেত্রে ওই বিবাহিত স্ত্রী অপরাধের সহযোগী রূপে কোন শাস্তি পাবে না”
এই ৪৯৭
ধারায় কাউকে শাস্তি প্রদান করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রমাণ করতে হবেঃ
▷ প্রথমত, আসামি কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম
করেছিল,
▷ দ্বিতীয়ত, ওই নারী বিবাহিত ছিল এবং তার
স্বামী বর্তমান,
▷ তৃতীয়ত, অভিযুক্ত বিবাহের বিষয়টি জানত এবং
তা বিশ্বাস করার কারণও ছিল,
▷ চতুর্থত, ওই যৌন সঙ্গম নারীর স্বামীর সম্মতি
বা সমর্থন ব্যতিরেকে হয়েছিল,
▷ পঞ্চমত, ওই যৌন সঙ্গম নারী ধর্ষণের শামিল ছিল
না অর্থাৎ, সঙ্গমে ওই নারীর সম্মতি ছিল।
মজার
ব্যাপার হচ্ছে- এই ধারানুযায়ী ব্যভিচারের অপরাধে দায়ী হবে শুধু ব্যভিচারী পুরুষই, ব্যভিচারে লিপ্ত স্ত্রীলোকটির কোন আইনি দায় নেই এবং দুষ্কর্মের সহযোগী
(Abettor) হিসেবে তার কোন শাস্তি হবে না। ব্যভিচার
প্রমাণিত হলেও স্ত্রীলোকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যাবেনা”!!!
দেড়শো
বছরের পুরনো এই ব্যভিচার আইনে আজ অব্দি কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। ১৮৬০ সালের
দণ্ডবিধির এই ৪৯৭ ধারা নিম্নোক্ত কারণে অসম্পূর্ণ, লিঙ্গ
বৈষম্যমূলক, সেকেলে এবং বর্তমান সময়ের উপযোগী নয়। কারন-
১) ‘যদি কোনো বিবাহিতা নারী পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তার
দায়-দায়িত্ব ওই পুরুষের যেমন, তেমনি ওই নারীরও। সেই
দায়িত্ব তো নারীটিকে নিতেই হবে। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম, তার
ফল ভোগ করলাম, কিন্তু দোষী হলো শুধু পুরুষ, সেটা তো ঠিক নয়।”
২)
ব্যভিচারে লিপ্ত নারী-পুরুষের মধ্যে নারীটির অন্যের “বিবাহিত স্ত্রী” হওয়াটা এই ধারায় একটি শর্ত,
ব্যভিচারী পুরুষটির বিবাহিত হওয়াটা শর্ত নয়। ৪৯৭ ধারার এই অংশটি
অসম্পূর্ণ এবং ধর্মীয় আইনের সাথে সাংঘর্ষিক।
৩) ৪৯৭
ধারার ব্যাখ্যানুযায়ী একজন বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে একজন অবিবাহিত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্ত নারীর মধ্যে যদি পারস্পরিক সম্মতির
ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক হয়, তাহলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য
হবে না এবং ওই লোকের স্ত্রীটি অভিযুক্ত স্বামী কিংবা পরকীয়ায় লিপ্ত নারীটির
বিরুদ্ধে কোন আইনগত প্রতিকার পাবে না।
৪) ৪৯৭
ধারা অনুযায়ী, স্বামীর “সম্মতি”
(Consent) নিয়ে বা জ্ঞাতসারে (Connivance) তার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষ যৌন সঙ্গম করলে তা ব্যভিচারের
সংজ্ঞায় পড়বেনা। স্ত্রীর সম্মতি এখানে অপ্রাসঙ্গিক। ব্যভিচারে বিবাহিতা মহিলার
স্বামীর সম্মতি থাকা মানে কী? স্ত্রী কি স্বামীর সম্পত্তি
না পণ্য?
দণ্ডবিধির
৪৯৭ ধারাটি বৈষম্যমূলক এবং দ্বীন ইসলাম ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই আইন
মুসলিম দেশে এত বছরকাল ধরে আছে কি করে ?
পরকীয়া ও
ব্যভিচার একটি সামাজিক অনাচার, সামাজিক, দ্বীনি ও নৈতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। তাই ৪৯৭ ধারা বাতিল করে দ্বীন
ইসলাম সম্মত আইন প্রনয়ন করা এখন সময়ের দাবি।